মাহমুদুর রহমান মাহমুদ, চকরিয়া ::
ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে বর্তমানে সিংহের সংখ্যা ৩টি। একটি সিংহ এবং অপর দুটি সিংহী। সিংহটির বয়স ৯ বছর হলেও সিংহী দুটি চলে গেছে বৃদ্ধের কাতারে। তাদের বয়স ১৪ ও ১৫ বছর। পার্কে চারটি বাঘ-বাঘিনীর বয়সও ১৪ পেরিয়ে যাচ্ছে। ফলে বয়সের ভারে প্রজনন ক্ষমতা হারিয়েছে প্রাণীগুলো। জলহস্তী, হরিণ, জেব্রা, ওয়াইলবিস্ট ও বনগরুর বংশবিস্তার হলেও বাঘ-সিংহের সংসারে নতুন অতিথি না আসায় হতাশ হচ্ছেন দর্শনার্থীরা।
জানা গেছে, পার্কের প্রধান আকর্ষণ বাঘ ও সিংহ। দীর্ঘদিন ধরে প্রাণীগুলোর সংসারে নতুন অতিথি না আসায় হতাশ হচ্ছেন পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা। বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১ বছরের মধ্যে ৪টি সিংহ মারা গেছে। সম্প্রতি গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক থেকে দুটি সিংহ আনা হয়েছে। তবে সিংহী দুটির প্রজনন ক্ষমতা না থাকায় প্রাণীগুলোর সংখ্যা বাড়ার আশা নেই বলে জানিয়েছে পার্ক কর্তৃপক্ষ।
পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম জানান, ঢাকা থেকে দুগ্ধপোষ্য ৪টি বাঘের বাচ্চা পাচারকারীদের থেকে উদ্ধার করেছিল র্যাব। পরে সাফারি পার্কে লালন-পালন করার পর সেগুলো সতেজ ও সবল হয়ে ওঠে। তবে খাদ্য সংকটের অজুহাত দেখিয়ে বাঘ ও বাঘিনীকে পৃথক খাঁচায় আবদ্ধ রেখে অঘোষিতভাবে জন্মনিরোধ করতে গিয়ে নির্ধারিত বয়সে প্রজনন করা যায়নি। পরে বাঘ ও বাঘিনীকে একই খাঁচায় রাখলেও তাদের সংসারে নতুন অতিথি আসেনি।
সাফারি পার্কের ভেটেরিনারি সার্জন ডা. জুলকার নাইন জানিয়েছেন, বাঘ ও সিংহ ৪ বছর বয়স থেকে প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে। ১০ বছর বয়স পর্যন্ত তাদের প্রজনন ক্ষমতা থাকে। মুক্ত অবস্থায় বাঘ-সিংহ ১২ থেকে ১৪ এবং বন্দি অবস্থায় ১৫ থেকে ১৮ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকে। সে ক্ষেত্রে পার্কে থাকা ৪টি বাঘ ও দুটি সিংহীর বয়স অনেকটা পূর্ণ হয়ে গেছে। নতুনভাবে বাঘ ও সিংহ সংগ্রহ করা না হলে পার্ক বেষ্টনী বাঘ ও সিংহশূন্য হয়ে পড়বে বলেও জানান তিনি।
পার্কে বর্তমানে একটি বয়স্ক বনগরু (গয়াল) রয়েছে। ২২ বছর বয়সী গয়ালটি বর্তমানে ঠিকমতো ঘাস খাওয়ার ক্ষমতাও হারিয়েছে। যে কোনো সময় গয়ালটি মারা যাওয়ার আশঙ্কা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কে ৯০০ হেক্টরের মধ্যে ৬০০ হেক্টর বাউন্ডারি ওয়ালের আওতায় আনা হলেও বন্যহাতির তাণ্ডবে ২১ জায়গায় ভেঙে গেছে। ভাঙা অংশগুলো ৫ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত বিস্তৃত। এগুলো জরুরিভাবে মেরামত করা না হলে উন্মুক্ত বিচরণ করা প্রাণীগুলো পালিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যদিও ভাঙা অংশগুলো লোহার নেট দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে বলে দাবি পার্ক কর্তৃপক্ষের। তারা বলছেন, পাহাড়ে খাদ্য সংকটের কারণে বন্যহাতির পাল খাবারের সন্ধানে বারবার দেয়াল ভেঙে পার্কে প্রবেশ করছে। এজন্য দেয়াল নির্মাণ করেও বন্যহাতির পার্কে প্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না।
বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগ ও সাফারি পার্কের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঘ-সিংহসহ বিদেশি প্রজাতির প্রাণী সংগ্রহের প্রক্রিয়া চলছে। আগামী অর্থবছরে অর্থ বরাদ্দ পেলে কিছু প্রাণী সংগ্রহ করা হবে। পার্কের বাঘ-সিংহগুলো প্রজনন ক্ষমতা হারালেও সুস্থ-সবল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
পাঠকের মতামত: